১২০ দিনে বেসিক ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট শিখুন ৷৷ পর্বঃ ১

ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট শিখতে চাচ্ছেন, কিন্তু সমস্যার জন্য মেন্টর পাচ্ছেন না কিংবা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হতে পারছেন না ? তাহলে এই পোষ্ট টি আপনার জন্য।
শুরুতেই বলে নিচ্ছি এই পোষ্টে কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রোমোট করা হবে না বা এটা কোন ব্যাবসায়ীক চিন্তা ধারার পোষ্ট নয়। আর আমি আপনার সাথে ১২০ দিন তথা ৪ মাসের একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই আমি ব্যাসিক বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব কারণ, আপনি মাত্র ১২০ দিনেই প্রফেশনাল হতে পারবেন না। চলুন শুরু করি।
ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট শেখার আগে আপনাকে অন্তত ৩ দিন গুগল, ইউটিউব এবং বিভিন্ন ব্লগ সহ ফেইসবুকের ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী গ্রুপ, পেইজ গুলো থেকে একটু সময় নিয়ে ঘাটাঘাটি করে আপনাকে এটা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে এবং ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট কি? কেন? কিভাবে? ইত্যাদি বিষয় গুলো জেনে নিতে হবে।
এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, গুগলে কি লিখে সার্চ করবো? আপনার জন্য উত্তর হবে, প্রথমেই ইংলিশ আর্টিকেল বা ব্লগ না পড়ে আগে নিজ মাতৃভাষা বাংলায় পড়ে বিষয়টা নিজের মেধায় গেঁথে রাখুন। গুগলে সার্চ করতে পারেনঃ-
· ওয়েব ডিজাইন কি?
· ওয়েব ডিজাইনের ইতিহাস
· ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট কি?
· একজন ওয়েব ডিজাইনার বা ওয়েব ডেভেলপার এর কাজ কি?
· ওয়েব ডিজাইন কিভাবে শেখা যাবে?
· ওয়েব ডেভেলপার হতে হলে কি করতে হবে?
· ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য কি?
· ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট শিখতে হলে কি কি করতে হবে?
· ওয়েব ডিজাইন এর জন্য কেমন কম্পিউটার দরকার?
· কে কখনোই ওয়েব ডিজাইনার হতে পারবে না?
· ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?
· ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট কি?
· ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্ট কি?
· ওয়েব ডিজাইনের ভবিষ্যত কি?
· ওয়েব সাইট কত প্রকার ও কি কি?
· কিভাবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়?
এবং আরো অন্যান্য কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করতে পারেন।
এরপরের কাজ হবে গুগল আর ইউটিউবের নিজস্ব অ্যালগরিদমের... ওরা ই আপনাকে ওয়েব ডিজাইনের ওপর নতুন এবং তথ্যবহুল ভিডিও, ব্লগ, আর্টিকেল রিকমেন্ড করা শুরু করবে যখন আপনি ইউটিউবে কোনো ভিডিও দেখতে থাকবেন, কিংবা গুগলে কোনো কিছু সার্চ করতে যাবেন।
ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর সম্পর্কে ধারণা এসে গেলে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি কোনটিতে সবচেয়ে বেশী পারদর্শি হতে চান। আপনি যদি মনে করেন, আপনার ভেতর যথেষ্ট সৃজনশীলতা রয়েছে, তাহলে আপনি ওয়েব ডিজাইনকে শেখার বাছাই করতে পারেন। আর যদি আপনার যদি কোডিং এ প্রচুর আগ্রহ থাকে তাহলে আমি আপনাকে বলবো, আপনি ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে শেখার জন্য বাছাই করুন। মনে রাখবেন, শেখার কোনোই বিকল্প নেই। আপনার মধ্যে যদি যথেষ্ট সৃজনশীলতা এবং কোডিং এর প্রতি অদম্য আগ্রহ থাকে, তাহলে আমি আপনাকে বলবো, আপনি ক্যারিয়ার হিসেবে ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে বাছাই করুন।
আমার মতে, যতদিন ইন্টারনেট আছে ততদিন একজন দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার কিংবা ডেভেলপারের মূল্যায়ন থাকবেই। তাই, শুরুতেই টাকা উপার্জনের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে শেখার প্রতি মনোযোগ দিন।
কিভাবে শুরু করবেন শেখা?
মনে করা গেলো আপনি তিনদিন আমার দেয়া নির্দেশিকা অনুসারে স্টাডি করলেন, এরপরে কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না? আচ্ছা, আমি বলছি, ধৈর্য ধরে বাকী লেখা গুলো পড়ুন।
শুরতেই আপনার মনকে বুঝিয়ে নিন এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন যে, আমাকে পরবর্তি চার মাস কঠোর অধ্যাবসায় করতে হবে। কেননা আপনি পরবর্তি চারমাস ওয়েব ডিজাইনের ব্যাসিক ফান্ডামেন্টালস গুলো আয়ত্ত করতে যাচ্ছেন।
মিশন ওয়েব ডিজাইনঃ-
আপনাকে প্রথম ১৫ দিন ওয়েব ডিজাইনের জন্য ৫ টি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
আর সেগুলো হলোঃ-
· ব্যালান্স তথা ভারসাম্যতা। আপনাকে ওয়েব ডিজাইন শেখার ক্ষেত্রে শুরুতেই ভারসাম্যতা রক্ষা করে চলতে হবে। এর প্রতিটি বিষয়েই আপনাকে সম্যক ধারণা রাখতে হবে।
· কালার। ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইটে সেই ওয়েবসাইটের ধরণ অনুসারে কোন কালার ব্যাবহার করা যাবে অথবা ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে কালার বা রং এর গুরুত্ব ও এর ব্যাবহার ইত্যাদি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে।
· গ্রাফিক্স। একটি ওয়েবসাইটকে নান্দনিক এবং প্রফেশনাল করার জন্য সেই ওয়েবসাইটে গ্রাফিক্স (যেমনঃ- ছবি, ভিডিও, এনিমেশন ইত্যাদি) এর ব্যাবহার করার বিষয়টি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে এবং এগুলোর সঠিক ব্যাবহার এর ব্যাপারেও কিন্তু আপনাকে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।
· টাইপোগ্রাফি। একটি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট যেমন ব্লগ পোষ্ট, আর্টিকেল ,কিংবা অন্য সাধারণ লেখা বা টেক্সট কে একজন ওয়েবসাইট পরিদর্শক এর জন্য সহজেই পড়ার যোগ্য করে তোলে সেই ওয়েবসাইটের ডিজাইন এর জন্য ব্যাবহারিত সুন্দর টাইপোগ্রাফির বিষয়টি। টাইপোগ্রাফির মধ্যে একটি সাধারণ লেখার সাইজ হতে শুরু করে সেই লেখাটির কালার, লাইন স্পেসিং, লেটার স্পেসিং ইত্যদি বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত। তাই আপনাকে টাইপোগ্রাফি সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতে হবে।
· হোয়াইট স্পেস বা সাদা ফাকা যায়গা। ওয়েবসাইটকে পরিষ্কার, গোছানো এবং দৃষ্টিনন্দন করার জন্য কিংবা ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সেকশন এর মধ্যে যথেষ্ট ফাকা রাখার জন্য হোয়াইট স্পেস বিষয়টি ব্যবহৃত হয়। মনে করুন, একটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করলেন আর সেখানে দেখলেন একটা কন্টেন্ট হতে অন্য কন্টেন্টের মধ্যে যথেষ্ট ফাকা অংশ নেই, তখন দেখবেন হয়ত আপনি সেই ওয়েবসাইটটির কন্তেন্ট গুলোকে আলাদা করে বুঝতে কিছুটা দ্বিধায় পরে গিয়েছেন। তাই এইসব সমস্যা গুলো থেকে ওয়েবসাইটকে বিরত রাখতে আপনাকে ওয়েব ডিজাইনের জন্য হোয়াইট স্পেসিং বিষয়টি নিয়ে ধারণা রাখতে হবে।
এভাবেই আপনাকে মিশন ওয়েব ডিজাইনের প্রথম ১৫ দিন অতিক্রম করতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা পেয়ে গেলে আপনি এবার মূল কাজ শুরু করতে যাবেন। এজন্য আপনাকে টানা দুই মাস তিনটি জিনিশ শিখতে হবে। আর সেগুলো আপনাকে খুব ভালো ভাবে শিখতে হবে। আপনি এদের সম্পর্কে প্রথমেই ইউটিউব থেকে অনেক অনেক ভালো মানের বাংলা ভিডিও টিউটোরিয়াল থেকেই ব্যাসিক ধারণা পেতে পারেন, একই সাথে আপনি w3schools এর ওয়েবসাইট থেকে ব্যাসিক ধারণা গুলো উদাহরণ এর মাধ্যমে পেয়ে যেতে পারেন সাথে আর গুগল মামা তো আছেই... সব ওয়েবসাইট আর ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে এই তিনটা থাকবেই। মানে বলা চলে এগুলা ওয়েবের মূল শক্তি।
আর সেই তিনটি জিনিশ হলো,
· এইচ টি এম এল বা, হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ। এটি হচ্ছে একটি মার্কআপ ভাষা, শেখা অত্যান্ত সহজ। আপনাকে একজন ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে অবশ্যই সবার প্রথমে এইচ টি এম এল দিয়েই শুরু করতে হবে। এটি দিয়েই মূলত একটি ওয়েবসাইটের কাঠামো তৈরি করা হয়। একটি ওয়েবসাইটকে যদি একজন মানুষের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে বলতে হবে যে, একজন মানুষের শরিরের যে কঙ্কাল রয়েছে, এইচ টি এম এল হলো ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে সেই কঙ্কাল। কোথায় একটি ওয়েবসাইটের শুরু হবে, কোনটা মেইন অংশ হবে, কোনটা ফুটার হবে, কোন কন্টেন্ট কোথায় থাকবে ইত্যাদি বিষয়গুলো এইচ টি এম এল - ই নির্ধারণ করে।
· সি এস এস বা ক্যাসকেডিং স্টাইল শিট। একটা ওয়েব সাইট এর লেআউটকে স্টাইলিং করে দৃষ্টিনন্দন করার জন্যে এবং ওয়েব সাইট এর কন্টেন্ট গুলোকে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্যই মূলত এটিকে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। মনে করা গেলো, এইচ টি এম এল দিয়ে একটি ওয়েব সাইটের কঙ্কাল বা কাঠামো তৈরি করা হলো, এখন সেটাকে মাংশ দিয়ে (অর্থাৎ, সিএসএস ব্যবহার করে) আরো সুন্দর করতে হবে । আর এই সুন্দর করার কাজ পুরোটাই সিএস এস দিয়ে করা সম্ভব।
· জে এস বা জাভাস্ক্রিপ্ট। জাভাস্ক্রিপ্ট হলো উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা। এটা ক্লায়েন্ট এবং সার্ভার উভয় দিকেই কাজ করতে পারে। জাভাস্ক্রিপ্ট এইচ টি এম এল বা সি এস এস – এর থেকে একটু কঠিন। একটি ওয়েবসাইটকে আরো ইন্টারঅ্যাক্টিভ করার জন্য এবং অসংখ্য সুযোগ সুবিধা যুক্ত করার জন্য মুলত জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যাবহার করা যায়। এটা একটি স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। একবার ভাবুন তো, একটা মানুষকে সুন্দর দেখাতে হলে কোন জিনিশটির প্রয়োজন বেশি? সেটা হলো তার পোশাক-পরিচ্ছদ। আর একটি ওয়েবসাটকেও এভাবে আরো সুন্দর এবং ইন্টারঅ্যাক্টিভ করার জন্য জাভাস্ক্রিপ্তের ব্যাবহার করা হবে। এটাকে আপনি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে শিখুন। কারন,জাভাস্ক্রিপ্টের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এরপরে ১৫ দিন সময় নিয়ে আপনি বেশ কিছু টুলস সম্পর্কে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। আপনি বিভিন্ন টেক্সট এডিটর যেমনঃ- এটম, সাবলাইম টেক্সট, নোটপ্যাড++, ভিজুয়াল স্টুডিও কোড ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারেন। এছাড়াও আপনি গুগল ক্রোম এবং মজিলা ফায়ারফক্স ব্রাউজারের ডেভেলপার টুলস সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখবেন, কেননা সেগুলো আপনাকে ভবিষ্যতে অনেক হেল্প করবে। আপনি ওয়েব ডিজাইনের কাজের জন্য ফটোশপ এর ব্যাসিক কাজ গুলো যেমন ছবি ক্রপ করা, ছবি রিসাইজ করা, ছবির কালার চেইঞ্জ করা ইত্যাদি কাজ গুলো শিখে নেবেন।
সর্বশেষ মাসটি আপনি বিভিন্ন ওয়েব ডিজাইন প্রজেক্ট তৈরি করার মাধ্যমে অতিবাহিত করার চেষ্টা করুন এবং বিভিন্ন গ্রুপে কিংবা কোনো অভিজ্ঞ বড় ভাইকে আপনার সেই প্রজেক্ট গুলো দেখানোর চেষ্টা করবেন এবং ওনার থেকে ফিডব্যাক নেয়ার চেষ্টা করবেন। এই মাসে আপনি অন্তত ৫ টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট তৈরি করবেন।
আজ তাহলে এই পর্যন্তই রইলো। সবার সুস্থতা কামনা এবং শুভ কামনা করে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি, ভালো থাকবেন এবং শেখার প্রতি লেগে থাকবেন। লেখা টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। লেখনীতে কোথাও ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কোথাও ক্রেডিট ছাড়া পোষ্ট টি কপি করলে মনঃক্ষুণ্ণ হবো। তাই শেয়ার কিংবা কপি করতে ছাইলে ক্রেডিট দিতে যেন ভুলবেন না। মনে রাখবেন, ক্রেডিট দিতে টাকা লাগে না ভাই
ধন্যবাদ

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post