প্রথমে জেনে নেই ফ্রিল্যান্সিং জিনিসটা আসলে কি? ফ্রীলান্সিং জিনিসটা হচ্ছে একটি পেশা যেই পেশায় সবাই নিয়োজিত হতে পারে। তবে এই পেশায় আপনি নিজেই নিজের বস। যে কোন স্কিল কিংবা যোগ্যতা দিয়ে নিজ নিজ সেক্টরে আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে অন্য কারো থেকে একটি কাজ নেন এবং সে কাজের বিনিময় পেমেন্ট সরাসরি আপনি নিজেই রিসিভ করেন এবং কাজটি আপনি নিজেই করেন সেটা আপনার বাসায় অফিস কিংবা যেখানেই থেকেই হোক, তাহলে আপনি যে কাজটি করলেন সেটি ফ্রীলান্সিং। আপনার ক্লাইন্ট এখন দেশি কিংবা বিদেশী কিংবা কোন এলিয়েন 😜 হোক সেটা ব্যাপার না, ব্যাপার হচ্ছে ক্লায়েন্ট থেকে সরাসরি আপনি নিজেই কাজ করেছেন এবং এর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেছেন, তাহলে এটা হবে ফ্রীলান্সিং। কিন্তু যদি কাজ নিয়ে আপনি আবার অন্য কাউকে নির্দিষ্ট কিছু এমাউন্ট দিয়ে, সেটি হতে পারে আপনার কোন কলিগ কিংবা আপনার টিম মেম্বার, যাই হোক, কাজটি করিয়ে নিয়ে ক্লায়েন্টকে আবার আপনি কাজটি বুঝিয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন করেছেন তাহলে সেটি হবে আউটসোর্সিং। এক্ষেত্রে কাজটি আপনি নিলেন এবং অন্য কোন মাধ্যমে কাজটি করিয়ে আবার আপনার ক্লায়েন্টকে ডেলিভার করলেন। আর যদি আপনি মোটামুটি নিজেই অফিস খুলে বসেন এবং 4-5 জন সহকর্মী রাখেন আপনার কাজের জন্য তাহলে আপনি একজন ছোট উদ্যোক্তা। তবে শুরুটা হয় সবার ওই ফ্রিল্যান্সার টাইটেল দিয়ে।
প্রশ্ন হলো আমি ফ্রীল্যান্সার হতে চাই, কিভাবে শুরু করব?
ফ্রীলান্সিং এমন একটি পেশা, এখানে পুঁথিগত যোগ্যতা থেকেও প্র্যাকটিক্যাল যোগ্যতা বেশি প্রয়োজন। মনে করেন আপনি অনেক বড় একজন টাইটেল ওয়ালা অ্যাকাউন্ট অফিসার। কিন্তু আপনি সফটওয়্যার সংক্রান্ত যতগুলো একাউন্টিং সমস্যা তৈরি হয় সেগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ, তাহলে আপনার ওই যোগ্যতার কোন ভ্যালু নেই অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিংয়ে। আরেকটা উদাহরণ দেই, আপনি অনেক বড় মাপের একজন ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু আপনি সফটওয়্যার সংক্রান্ত ম্যাথমেটিক্যাল সলিউশন গুলো করতে ব্যর্থ এবং কালের সাথে আপডেট না, তাহলে সেই ক্ষেত্রে আপনি ব্যর্থ। এখন যেই ছেলেটির ইঞ্জিনিয়ারিং এ কোন ডিগ্রী নেই কিন্তু তার মেধা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে সে বিশেষ কোন ইঞ্জিনিয়ারিং সফটওয়্যার এ খুবই পারদর্শী, তাহলে ওই ছেলেটির চাহিদা বেশি। উদাহরণটি এজন্যই দিলাম যে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে প্র্যাকটিক্যাল বিদ্যা প্রয়োজন বেশি তার মানে এই নয় যে আপনি একদম পুঁথিগত হীন হয়ে যাবেন।
অতএব আমার সাথে সাথে আপনারাও ঠিকই বুঝতে পেরেছেন ফ্রিল্যান্সিং পেশাতে আত্মনিয়োগ করার পূর্বে আপনার যেকোনো একটি কাজে তবে পরামর্শ হচ্ছে কোন কম্পিউটার ভিত্তিক কাজ খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
কিন্তু একথা বলার পরেই প্রশ্ন চলে আসে তাহলে ভাইয়া আমি কোন কাজটা শিখব। খুবই ভাল একটি প্রশ্ন এবং মনে হয় নতুনদের সবার কমন পড়ছে। উত্তরটি আমি আমার মতই দিচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আপনি তিনটি জিনিস একটু ভালোভাবে বিবেচনা করবেন। নিজের ভালো পাগলেও বোঝে, এই ব্যাপারটি আপনি নিজেই বিবেচনা করতে পারবেন। তবে আমি বলে দিচ্ছি বিবেচনা টি কিভাবে করবেন। প্রথমে আপনি একটু কষ্ট করে Google এ গিয়ে সার্চ করবেন, Freelance Job categories, দেখবেন অনেক ডাটা পাবেন, বিভিন্ন ওয়েবসাইট গুলো একটু রিসার্চ করেন। তারপর কয়েকটি মার্কেটপ্লেস যেমন আপওয়ার্ক , ফ্রিল্যান্সার অথবা ফাইবার এই ওয়েবসাইট গুলোতে সাধারণ ভিজিটর হিসেবে ব্রাউজ করেন। সেখানে জব ক্যাটাগরিজ গুলো একটু চোখ বুলিয়ে নিন। দেখবেন শতশত ক্যাটাগরিস রয়েছে। পেমেন্ট কম কিংবা বেশি দিকে না তাকিয়ে একটু নিজের মনের দিকে তাকান। ক্যাটাগরি গুলো দেখার সময় কোন ক্যাটাগরিতে আপনার সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং এবং ভাললাগা কাজ করতেছে। কোন কাজটা শেখার জন্য আপনার মন বেশি টানতেছে। কোন কাজটি আপনি ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান। উপরের এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে কয়েকটি ক্যাটাগরি লিস্ট করুন।
এখন বিবেচনা পর্ব 2, প্রথমে আপনার শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা বিষয় এর সাথে কোন ক্যাটাগরি যাচ্ছে কিনা দেখুন। যদি সরাসরি ও না যায়, তাহলে কোনরকম সম্পৃক্ত আছে কিনা তা দেখুন। যদি থেকেই থাকে তাহলে নিশ্চিন্তে সেই ক্যাটাগরি টি সিলেক্ট করে ফেলুন। আর যদি আপনার সাবজেক্ট এর সাথে ক্যাটাগরি কোন মিল না থাকে হতাশ হবার কিছু নেই। কারণ আমাদের দেশের ম্যাক্সিমাম টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সাররা শিক্ষাগত প্রফেশন এবং কেরিয়ার প্রফেশন একদম একটা আরেকটার বিপরীতে। যেমন দেখবেন সে হয়তো ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু কাজ করতেছে একজন সফটওয়্যার এক্সপার্ট হিসেবে কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে। সেও কিন্তু একদিন আপনার মত দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল, কিন্তু তার ওই ক্যারিয়ার সিলেকশনে ভালোবাসা ছিল বলেই আজকে সে টপরেটেড। তাই যদি না মেলে হতাশ হবার কিছু নেই। সেই ক্ষেত্রে আপনার বাছাই করা ক্যাটাগরি গুলোর উপর একটু বেসিক আইডিয়া নেওয়া শুরু করেন। রেফারেন্স হিসেবে গুগল এবং ইউটিউব ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। যেহেতু আপনি আপনার ক্যাটাগরিগুলো কে মোটামুটি একটু বুঝতে পারছেন, এখন আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেন কোন বিষয়টি আপনার কাছে সহজ এবং খুবই এক্সাইটেড মনে হয়েছে। নিঃসন্দেহে সেটি সিলেক্ট করে ফেলেন।
ওকে, এখনতো ক্যাটাগরি সিলেক্ট করা হয়ে গেল। তারপর কি করব?
আপনার এই কাজটি এর ওপর বেসিক আইডিয়া ইউটিউব থেকে নিয়ে নিন। প্রফেশনালভাবে এই সেক্টরে কাজ করে এরকম কিছু লোকের সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচিত হন। কাজ সংক্রান্ত দুই একটা পরামর্শ নিতে পারেন কিন্তু বিরক্ত করবেন না। তাহলে কিন্তু সাপোর্ট পাবার আশা খুবই কম থাকে। সম্মান দিয়ে তাদের থেকে বিভিন্ন পরামর্শ চান, অবশ্যই সবাই হেল্প করবে। তারপর আপনার ওই ক্যাটাগরি এর ওপর ভালো একজন মেন্টর (যে কাজ শিখায়) অথবা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে একটি কোর্স করে ফেলুন। মনে রাখবেন, সঠিক গাইডলাইন এবং সঠিক মেন্টর ছাড়া ভালো কাজ শিখা সম্ভব নয়। বিগিনার হিসেবে যদি আপনি শুধুমাত্র ইউটিউব অথবা অন্যান্য সোর্সের ওপর ডিপেন্ড করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে কাজ শিখার পরিবর্তে মিসগাইড কিংবা বিরম্বনা হবার সম্ভাবনা বেশি। ঠিক আছে আপনার সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি প্রাথমিক অবস্থায় একটি কোর্স করুন, তারপর থেকে নিজেকে এডভান্স লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রিসোর্স এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলোর সহযোগিতা নিন। সে ক্ষেত্রে আপনি বুঝতে পারবেন কোনটি আপনার প্রয়োজন কোনটি আপনার প্রয়োজন নয়। এরকমভাবে আপনার স্কিল ডেভেলপ করতে থাকেন। মোটামুটি একটি পর্যায়ে কাজ শিখার পর এখন নিজের জন্য কিছু প্রেকটিকেল কাজ করেন অথবা লোকেল কোন অফিসে কিছুদিনের জন্য জব করেন। তবে চাকরি করার মন মানসিকতা নিয়ে চাকরি করবেন না, এরকম একটি প্রতিষ্ঠান আপনি নিজেও একদিন দিবেন সেজন্যই এখানে কিছুদিনের জন্য প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যত রকমের ট্রেনিং আছে সেটি অর্জন করার জন্য আছেন, এইরকম মন-মানসিকতা গঠন করুন। প্রথমেই আর্নিং এর দিকে তাকাবেন না। বাস্তব কিছু জ্ঞান অর্জন করুন। একটি পর্যায়ে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার পরিবর্তন। আনুমানিক সর্বনিম্ন এক বছর ধরে রাখুন এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটির জন্য।
এবার আসুন আসল পর্বে। নিশ্চয়ই এতদিনে আপনার অভিজ্ঞতা কিংবা কাজের অনেকগুলো স্যাম্পল ও পোর্টফোলিও হয়ে গেছে। এখন আপনি আপনার সব স্যাম্পল পোর্টফোলিও পার্সোনাল সকল ইনফো দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং পারলে একটি পার্সোনাল ওয়েবসাইট গঠন করে ফেলুন। না পারলে পরিচিত কাউকে অল্প কিছু পেমেন্ট করে সহযোগিতা নিন। এরপর অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একটু রিসার্চ করুন। একেক মার্কেটপ্লেসে একেক রকমের ট্রিক্স। সেগুলো নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করুন। এরপর সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে অনলাইনে একাউন্ট করুন এবং পদ্ধতি অনুসারে বিড অথবা গিগ অথবা জব রিকুয়েস্ট করতে থাকুন। নিজে না জানলে সিনিয়রদের পরামর্শ নিন। ওই মার্কেটপ্লেস সংক্রান্তঃ লোকেল অনেক ভালো ভালো ফেসবুক গ্রুপ আছে গ্রুপ গুলোতে অ্যাড হন এবং পূর্বের সকল রকমের পোস্ট এবং ডকুমেন্টসগুলো স্টাডি করতে থাকুন। শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন। চিন্তামুক্ত থাকুন, শান্ত থাকুন এবং রুটিনমাফিক প্লেন মোতাবেক কাজ করতে থাকুন। হয়তোবা পরবর্তী কিছুদিনের মাঝেই আপনি হয়ে উঠবেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। আজ তাহলে এটুকুই। পরবর্তীতে আবার নতুন কোন বিষয় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে। সকল নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আমার শুভকামনা। তো ব্যাটেলিয়ান গ্রুপ, যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাক এখন থেকেই। হ্যাপি ফ্রিল্যান্সিং।
